কিংবদন্তি ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন


কিংবদন্তি ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন

কিংবদন্তি ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন

ক্রিকেট বিশ্বকে হটাৎ শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন। গত শুক্রবার ০৪ মার্চ ২০২২ থাইল্যান্ডের কোহ সামুই দ্বীপের একটি ভিলায় নিজের কক্ষে অচেতন হয়ে পড়েন এ মহাতারকা। মহাতারকাকে হাসপাতালে নিলেও কোনো লাভ হয়নি, চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এক ভিডিওবার্তায় ওয়ার্নের দীর্ঘদিনের ম্যানেজার জেমস আর্সকিন , তার মৃত্যুর শেষ সময়ের ঘটনাগুলো বর্ণনা করেছেন। কীভাবে পেলেন  ওয়ার্নের মৃত্যুর খবর, তিনি (আর্সকিন) কীভাবে ওয়ার্নের পরিবারকে সেই খবর জানালেন সবই বলেছেন আর্সকিন।

সেই ভিডিও বার্তায় আর্সকিন বলেছেন, ওয়ার্ন চাচ্ছিলেন নিজেকে একটু সময় দিতে, তাই এক বছরের জন্য সবকিছু থেকে দূরে তথা ছুটি নিতে। যদিও তিন মাসের ছুটি নিয়ে নিজেরকে সময় দিতে থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন ওয়ার্ন। কিন্তু  ছুটির দ্বিতীয় দিনই চিরতরে ছুটিতে হারিয়র গেলেন এ কিংবদন্তি।

ওয়ার্নের মৃত্যুর তথ্য সবার আগে প্রকাশ  অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ গণ মাধ্যম ফক্স ক্রিকেট। সেই ফক্স ক্রিকেটেই ওয়ার্নের স্মরণে তার শেষ সময়ের কথাগুলো বলেছেন আর্সকিন। তাকে প্রথম ফোনটি করেছিলেন ওয়ার্নের ডকুমেন্টারির নির্মাতা অ্যান্ড্রু নেউফিতো। যিনি ওয়ার্নের সঙ্গে থাইল্যান্ডেই ছিলেন।

সেই সময়ের পুরো বর্ণনা আর্সকিনের জবানিতে নিচে তুলে ধরা হলো:

রাত ১০টা ৩৭ মিনিটের দিকে আমি একটি ফোন পেলাম অ্যান্ড্রু নেউফিতোর কাছে। যে কি না থাইল্যান্ডে ওয়ার্নের সঙ্গে ছিল। ওয়ার্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে তিন মাসের ছুটি কাটাবে। সে মূলত এক বছরের ছুটি চাইছিল। আমি বলেছিলাম, এক বছরের ছুটি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে সবাই তোমাকে ভুলেই যাবে।

তাই সে (ওয়ার্ন) তিন মাসের ছুটিতে বের হয়েছিল এবং এটি মাত্র শুরু হয়েছিল। তারা আগের রাতেই সেখানে পৌঁছায়। তারা ৫টার দিকে পানীয় পানের জন্য সময় ঠিক করে রেখেছিল... দেরি দেখে ৫টা ১৫ মিনিটে নেউফিতো ওয়ার্নের দরজায় নক করে। কারণ ওয়ার্ন সবসময় সময়ের ব্যাপারে সচেতন ছিল।

তো নেউফিতো দরজায় নক বলছিল, ‘আসছো না কেন, দেরি হয়ে যাচ্ছে।’ তখনই সে (নেউফিতো) বুঝতে পারে কোনো সমস্যা হয়েছে এখানে। নেউফিতো ওয়ার্নকে ঘুরিয়ে মুখে মুখ লাগিয়ে সিপিআর দিতে শুরু করে। এমনটা প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলছিল।

এরপর অ্যাম্বুলেন্স এলো এবং তারা তাকে (ওয়ার্ন) হাসপাতালে নিয়ে গেলো। প্রায় ২০ মিনিটের পথ ছিল। প্রায় ৪৫ মিনিট পর আমি আবার ফোন পেলাম, ওয়ার্নকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।

আমি কিথের (শেন ওয়ার্নের বাবা) সঙ্গে কথা বললাম। তার ছেলে তখন মৃত। তিন ওয়ার্নের তিন সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। পরে ব্রুক ও জ্যাকসনের (ওয়ার্নের দুই সন্তান) সঙ্গে কথা বললাম। তাদের আমি মৃত্যুর খবর দিতে চাইনি। পরিস্থিতি তখন খুবই গম্ভীর মনে হচ্ছিল।

সিমিওন (ওয়ার্নের সাবেক স্ত্রী) তখন কনিষ্ঠ সন্তান সামারকে আনতে গিয়েছিল। আমরা তখন সিমিওনকে ফোন করে বললাম যে, সবাই যখন একসঙ্গে থাকবো তখন না হয় তাদের (সন্তাদের) বলবো যে শেন ওয়ার্ন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।

বিষয়টা যেনো এমন ছিল যে, কেউ আমাকে বলেছিলেন যে যখন কেউ জীবনের চেয়েও বড় হয়ে যায় তখন আপনি তার মৃত্যু মেনে নিতে পারেন না। আমার মনে হয় এটিই সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা। আপনি ৫২ বছরেই কারও মৃত্যু ভাবতে পারেন না। আপনি শেন ওয়ার্নের মৃত্যু ভাবতে পারেন না। কারণ সে অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব ছিল।

ওয়ার্নের সবচেয়ে দারুণ বিষয় ছিল, সে ইংল্যান্ডের রাণী কিংবা নর্দমায় থাকা মানুষ- দুজনের সঙ্গে একইভাবে কথা বলতে পারতো। এটি সত্যিই অনন্য এক গুণ। আমি বাজি ধরতে পারি যে, রাণীকে যেকোনো কিছু করতেই রাজি করে ফেলতে পারতো ওয়ার্ন। সে এমনই এক চরিত্র ছিল।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post